ধর্ষণের শাস্তি জুতার বাড়ি
শরীয়তপুর ও ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
১২ ফেব্রুয়ারি,
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে জুতার ২০টি বাড়ি দিয়েই এক গ্রাম্য সালিসে বিচার শেষ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর সালিসে উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য, মাতবর এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধর্ষণে অভিযুক্ত দুদু মিয়া খাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান। এদিকে পাবনার ভাঙ্গুড়ায়
বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক আত্মীয়র স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম গত রাতে গ্রামে সালিস বৈঠক ডাকেন।
জাজিরায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের চরলাউখোলা বালিয়াকান্দি গ্রামের ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন সরদার (৩৮), মোকসেদ মাদবর (৫০) এবং ভিডিও ধারণকারী নয়ন মোড়ল (২৪)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে ভুক্তভোগী গৃহবধূ জাজিরা থানায় একটি মামলা করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তিনজন গ্রেপ্তার হন। জাজিরা উপজেলার মূলনা ইউনিয়নে গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে এক গৃহবধূকে তাঁর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করেন দুদু মিয়া। আর এ ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন স্থানীয় নয়ন মোড়ল।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মোকসেদ মাদবরের বাড়িতে ভুক্তভোগী পরিবারের অনুপস্থিতিতে সালিসের আয়োজন করেন এলাকার কিছু মাতবর। উপস্থিত সালিসকারী-মাতবররা সেই
ভিডিও মোবাইল ফোন থেকে ডিলিট করে দেন এবং জুরিবোর্ডের মাধ্যমে অভিযুক্ত দুদুকে ৫০টি জুতার বাড়ি দেওয়ার রায় ঘোষণা করেন। ৩০টি মাফ করে দিয়ে জুতার ২০টি বাড়ি দেওয়া হয় দুদুকে। ইউপি সদস্য জসিম সরদার, মোকসেদ মাদবরসহ স্থানীয় সালিসকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতার ধর্ষণচেষ্টায় সালিস
ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাঙ্গুড়া গ্রামে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত সোহেল রানা (৩০) উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলেরসাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ ভাঙ্গুড়া গ্রামের সাহাদাত মোল্লার ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সোহেল রানা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর আত্মীয় গৃহবধূকে হয়রানি করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয় পরিবার একাধিক গোপন সালিস বৈঠকে সোহেলকে এমন অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে দেয়। কিন্তু এক সন্তানের জনক সোহেল গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গৃহবধূর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে একাকী পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। গৃহবধূর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে সোহেল পালিয়ে যান। রাতে গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে ঘটনা জানান। তখন উভয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা
বলে গত রাতে সালিস বৈঠকের আয়োজন করেন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম। তবে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ না দিয়ে সালিসের আয়োজন করায় ইউপি সদস্যের প্রতি অনেকেই ক্ষুব্ধ। এদিকে ঘটনার পর থেকে সোহেল পলাতক।
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করছি, সালিসের রায়ে উভয় পরিবারই খুশি হবে।’ ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিস বৈধ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমার জানা নাই।’ভাঙ্গুড়া ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, রাতে সালিস ডাকা হয়েছে। সালিসে বসলে অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা জানা যাবে। তারপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।