মেধাবীতে ভরে আছে আমার দেশ, কিন্তু মেধা’র বড় অভাব..! বাঙালী তো আছে লক্ষ-কোটি, কিন্তু মননে নেই বাংলা..! ২১ ফেব্রুয়ারী এলে এক দিনের চেতনাধারী হই, কিন্তু সারাবছর বাংলাভাষা নিয়ে আর চৈতন্যোদয় হয়না..! প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যে মূল্যবোধ লালিত হওয়ার কথা, সেটি হারিয়ে গেছে.. হারিয়ে যাচ্ছে..!! পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র…অবক্ষয়ের চিহ্ন তো সবখানেই..!! কে দেবে পরিত্রাণ..? কে করবে শুদ্ধি..??
গণমাধ্যম কে বলা হয় সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের দর্পণ। গণমাধ্যমে ফুটে উঠলেই আমরা উদ্বুদ্ধ হই ভাল বা মন্দে..। এই গণমাধ্যমে বাংলা ভাষাকে কতটুকু ব্যবহার করা হচ্ছে..? যতটুকু হচ্ছে.. কিভাবে হচ্ছে..? বাংলা সংস্কৃতি চর্চার মূল হচ্ছে বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা.., বিকৃত চর্চা নয়..! হাতে গোনা কয়েকটি অনুষ্ঠানে দেখা যায় সেই সঠিক চর্চা… বাকিটাতো সয়লাব বিকৃত বাংলায়..!! তথাকথিত ‘স্মার্ট’ হবার চর্চা..!
গণমাধ্যমের সাথে আমারও তো সম্পর্ক দীর্ঘ ১৬ বছরের..! এই ১৬ বছরে প্রায় ১৬০০ অনুষ্ঠান অন্তত ১৬ টি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে।বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ করে, বাঙালি পোষাক গায়ে জড়িয়ে, শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করে দেখিয়ে যাচ্ছি বাংলাদেশ কে..। আবার রাষ্ট্র যখন বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরে, সেসব কাজে তো কথা বলছি ইংরেজি ভাষায়..। আমি কি তবে তাদের মতো ‘স্মার্ট’ নই…? ‘আনস্মার্ট, হয়ে গেছি… ফিউশন ভাষার চর্চা করিনা বলে…??!!
আরে ভাই ইংরেজি বললে সঠিক ভাবে বলুননা.., বাংলার ঘাড়ে ভর করে কেনো..? সঠিক ইংরেজি বলে দেখিয়ে দিন আপনি সত্যিই ইংরেজি জানেন..। বাংলাকে কেনো কলুষিত করেন..??আরে…যে শুদ্ধ বাংলা জানেনা, জানার চেষ্টা করেনা.. সে শুদ্ধ ইংরেজি জানবে কোত্থেকে? বাংলা ভাষার সঠিক গাঁথুনি নেই বলেই তো, ইংরেজির ভিত নড়বড়ে..! এসব বাংলিশ ফিউশন ভাষা ছাড়োনা এবার.. আর কতো…??!! এই ফ্যাশন তো এখন পুরনো হয়ে গেছে..! এবার তো শেখো..!! প্রতিটা ভাষাকেই মর্যাদা দিতে শেখো.., পারবে তো তখনই, যখন নিজের ভাষার মূল্য এবং মূল্যবোধ তুমি ধারণ করতে শিখবে..!
কষ্টে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে.. যখন দেখি বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতিকে ভিনদেশী মোড়কে আবৃত করার চেষ্টা চালানো হয়, সেই চেষ্টার ফল ও ফসল আবার গিলিয়ে দেয়া হয় আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে…! আমাদেরই যদি শ্বাস বন্ধের অনুভূতি হয়… আমাদের অগ্রজদের তবে কেমন লাগে…!!? ২১ ফেব্রুয়ারি, প্রভাত ফেরী…এসব আমাদের কাছে গভীর আবেগের বিষয় ছিল, শিহরণ জাগানো অনুভূতি ছিল। বিদ্যালয়ে পা দেবার পর থেকে লেখাপড়া, সংস্কৃতি চর্চা এসব ক্ষেত্রে শুদ্ধ বাংলা চর্চার প্রতিযোগিতা লেগে থাকতো সারা বছর..! কারণ আমাদের শিক্ষক, বাবা-মায়েরা আমাদের ভেতর বাংলাকে বপণ করেছেন, বাংলার চর্চা করিয়ে বাংলাকে লালন করিয়ে ধারণ করতে শিখিয়েছেন..! কারণ তাঁরা বাংলা ভাষার অর্জন টা কে আমাদের চেয়ে অনেক কাছ থেকে দেখেছেন..! আজ আমরা যারা বাবা-মা.. আমরা কি পারছি আমাদের সন্তানদেরকে বাংলা লালন করতে শেখাতে… ধারণ করাতে..!!?? স্বরবর্ণ কি তারা চেনে..?! ব্যঞ্জনবর্ণের হিসাব-নিকাশ কি তারা জানে..?!
জাতীয় পতাকাকে যদি সালাম জানাই, জাতীয় সংগীতে যদি উঠে দাঁড়াই… তবে বাংলা ভাষাকে কোথায় স্থান দিতে হয়… তা কি আমরা বুঝিনা? নাকি বুঝতে চাইনা..??!! এই বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ গেছে….প্রাণ…!! জীবন দিয়েছে আমাদেরই অগ্রজরা… আমাদের বাপ-দাদারা….!! এই বিশ্বের বুকে আর কেউ করেনি তা…আমরা করেছি যা..! এই বাংলা ভাষাই তো আপনাকে আমাকে গর্বিত করেছে বিশ্বের বুকে..!!
চলুন…একটাবার…শুধু একটাবার বাংলা ভাষাকে আঁকড়ে ধরি বুকে….যেমন করে আঁকড়ে ধরি আমাদের বাবা-মা কে, আমাদের স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানকে, ভাই-বোন কে, প্রেমিক-প্রেমিকাকে, কিংবা প্রিয় বন্ধুটিকে….! বাংলাভাষা তো আমাদের চরম ত্যাগের আর পরম ভালবাসারই এক প্রাপ্তি..! আগলে রাখবোনা তাকে..!!!?